পাকিস্তানের সামনে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এশিয়া কাপ হকি-মর্যাদা এবং গৌরবের টুর্নামেন্ট। এশিয়ার দেশগুলোর কাছে যা বিশ্বকাপতুল্য। সেই ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের করাচিতে টুর্নামেন্টের পথচলা শুরু। দেখতে দেখতে ৩৫ বছর হয়ে গেছে। তিন দশকেরও বেশি সময় পার করা ঐতিহ্যবাহী এশিয়া কাপের নয়টি আসর গত হয়েছে। আজ থেকে দশম আসর শুরু। আয়োজক বাংলাদেশ। মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপ মিশন শুরু হবে জিমি-চয়নদের। একই দিন বিকেল ৩টায় মাঠে নামবে ভারত ও জাপান। এই ম্যাচটি শুরু হবে বিকেল ৩টায়।
দীর্ঘ ৩২ বছর পর টুর্নামেন্টের আয়োজক হয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৮৫ সালে যেবার প্রথম আয়োজক হয়েছিল সেবার মওলানা ভাসানীতে নয়, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঘাসের মাঠে হয়েছিল টুর্নামেন্টটি। এরপর নিয়মিতই এই টুর্নামেন্ট খেলে গেছে বাংলাদেশ, তবে আয়োজক হতে পারেনি। এবার আয়োজক হয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। এশিয়া কাপ সামনে রেখে নতুন সাজে সেজেছে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম। নীল টার্ফ আগেই বসেছে, তাতে নতুন সংযোজন ফ্লাডলাইট এবং ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড। গ্যালারিতে বাহারি রঙের আঁচড় পড়েছে। সদর দরজায় তোরণ। টুর্নামেন্ট শুরু হতে আর ঘণ্টা কয়েক বাকি। প্রস্তুত রণাঙ্গন, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে দলগুলোও।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ এবার ‘এ’ গ্রুপ থেকে লড়বে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, ভারত এবং জাপান। ‘বি’ গ্রুপে রয়েছে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ওমান এবং মালয়েশিয়া। এশিয়া কাপ মর্যাদার আসর, ৩২ বছর পর দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, প্রতিপক্ষ বিশ্বসেরা ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে এশিয়ার পরাশক্তি জাপান। সেখানে বাংলাদেশ টুর্নামেন্টের দুর্বলতম দলের একটি। কিন্তু বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের এসবে থোড়াই কেয়ার! আজ পাকিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলবে, যারা এশিয়া কাপের তিনবারের চ্যাম্পিয়নÑ এমন একটি দলের বিপক্ষে নামার আগে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা মানসিক চাপে থাকার কথা। কিন্তু অনুশীলনে দেখা গেল উল্টো চিত্র। জিমি, চয়ন, আশরাফুল, মিমো, পিন্টুরা খোজ মেজাজেই অনুশীলন করেছেন, স্টিক-বল হাতে নিয়ে নানান কসরতের পাশাপাশি পরস্পরের সঙ্গে খুনসুটিতেও মেতেছেন।
ঘরের মাঠ, ঘরের দর্শকের সামনে খেলবেন জিমিরা এ কারণেই হয়তো চাপ অনুভব করছেন না। তা প্রতিপক্ষ যে-ই হোক। তাছাড়া টুর্নামেন্ট সামনে রেখে প্রস্তুতিপর্বটাও তো খারাপ হয়নি। দীর্ঘ তিন মাসের অনুশীলন ক্যাম্প করেছে। চীনে গিয়ে ছয়টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। এর বাইরে বিকেএসপিতে ক্যাম্প হয়েছে, স্বল্প সময়ের হলেও জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। সব মিলে দলের প্রস্তুতিপর্বে দারুণ সন্তুষ্ট বাংলাদেশ কোচ মাহবুব হারুন। শিষ্যরা টুর্নামেন্টে ভালো করবে বিশ্বাস কোচের। ঐতিহ্য, মর্যাদার টুর্নামেন্ট কিংবা দীর্ঘ বছর পর আয়োজক হয়েছে এসব মন্ত্রে নয়, শিষ্যদের ভেতরে ভালো খেলার, দেশবাসীকে ভালো কিছু দেয়ার মন্ত্রই শেখাচ্ছেন। এসবই হয় তো প্রেরণা দিচ্ছে, আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে জিমির দলকে। অনুশীলনেও সেই চিত্রই ফুটে ওঠেছে।
যদিও এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড ভালো নয়। অন্য আন্তর্জাতিক আসরেও একই অবস্থা। এশিয়া কাপে এ পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়ে একবারও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। প্রথম আসরেই দেখা হয় দু’দলের। ৮২ সালের ওই আসরে ৯-০ তে হেরেছিল লাল-সুবজের দল। এরপর ঘরের মাঠে ১৯৮৫ সালে ব্যবধান অনেক আসে। এবার বাংলাদেশের হার ১-০ গোলের। সবশেষ দু’দল মুখোমুখি হয় ২০০৩ সালে মালয়েশিয়া এশিয়া কাপে। এবারো যথারীতি হার, ব্যবধান ৮-০ গোলের।
যে দলের বিপক্ষে অতীত সুখকর নয়, সেই দলের বিপক্ষেই কিনা ভয়ডরহীন খেলার কথা বলছেন মাহবুব হারুন। আক্রমণাত্মক কৌশল সাজাচ্ছেন। বল পজিশন ধরে রেখে আক্রমণ শানানোর বার্তা দিচ্ছেন জিমিদের। শুধু তাই নয় ইতিবাচক খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের কথাও ভাবছেন বাংলাদেশের কোচ।
গত ২০১৩ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। আট দলের মধ্যে সপ্তম হয়েছিল। এবার অবশ্য লক্ষ্য আরেকটু ওপরের দিকে। গত আসরে কেবল চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচটি ১১-৩ গোলের ছিল। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পিসি স্পেশালিস্ট মামুনুর রহমান চয়ন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে কাল চয়ন বলেন, ‘আমরা সেরা খেলাটাই এখানে খেলতে চাই। আশরাফুল, খোরশেদ এবং আমি রয়েছি পেনাল্টি কর্নার থেকে হিট করার জন্য। কারণ আমাদের পিসি পজিশন শক্তিশালী। অন্তত তিনটি পিসি থেকে একটি গোল যেন আমরা আদায় করতে পারি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
রেকর্ড, পরিসংখ্যানে পাকিস্তান এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশকে মোটেও খাটো করে দেখছেন না পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ ইরফান। বরং সমীহই করছেন। ঘরের মাঠ, ঘরের দর্শককের সামনে খেলবে জিমিরাÑ এটাকে বরং বাড়তি সুবিধাই স্বাগতিকদের। সেই সঙ্গে ভালো একটা ম্যাচ হবে বলেও মনে করেন মোহাম্মদ ইরফান।
১৯৮৫ এশিয়া কাপের পর বাংলাদেশে হকির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। এতটাই ছিল সেই উত্তেজনা-উদ্দীপনা যে গাছের ডাল ভেঙে স্টিক বানিয়ে গ্রামেগঞ্জে তখন হকিই খেলত বাংলার দামাল যুবারা। ফুটবল সে সময় এক নম্বর খেলা ছিল, যা এখন মৃতপ্রায়। ফুটবলকে পেছনে ক্রিকেট এখন এক নম্বর জায়গা দখল করে নিয়েছে। ক্রিকেটের পর হকির সুযোগ ছিল দ্বিতীয় আসনে বসার। কিন্তু নানান কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। এবারের এশিয়া কাপ শুধু জিমিদের সামর্থ্য প্রমাণের লড়াই নয়, হকির ইমেজ পুনরুদ্ধারেরও।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর